চলমান মামলাগুলোয় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একের পর এক জামিন পাওয়ায় দলটির নেতাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। তবে, সরকারের পদক্ষেপ ও মনোভাব নিয়েও কিছুটা শঙ্কা কাজ করছে তাদের মধ্যে।
এজন্য বিএনপি নেতারা সরকারের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে ‘ধীরে চলো’নীতিতেই এগোতে চান। পাশাপাশি ‘মাঠকাঁপানো’ রাজনীতিতে না গিয়ে সাদামাটা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন তারা।
বিএনপি সিনিয়র নেতা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আর কোনও বাধা থাকবে না।
তবে, এসব মামলায় জামিনের ক্ষেত্রে কোনও তাড়াহুড়া করতে চান না খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা বুঝেশুনে ‘ধীরে চলো’নীতিতে চলতে চান।
তাদের ধারণা, আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সরকারের আচরণ পর্যবেক্ষণ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এই মুহূর্তে দলের কৌশল হচ্ছে, খালেদা জিয়ার জামিনের আগে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীনদের কোনোভাবেই ক্ষেপাবে না বিএনপি।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার নামে থাকা ৩৬টি মামলার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা জামিন পেলেই মুক্তি লাভে কোনও বাধা থাকছে না জানিয়েছেন তার আইনজীবীদের পাশাপাশি বিএনপি নেতারাও।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা পুরোটাই রাজনৈতিক এবং এতদিন জামিন না হওয়া সরকারের সিদ্ধান্ত। সুতরাং আইনের কথা বলা হলে অনেকদিন আগেই তার জামিন পাওয়ার কথা।
যেহেতু রাজনৈতিকভাবে নেওয়া হয়েছে, সেহেতু সরকার যদি চাইলে অল্প সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া বেরিয়ে আসতেও পারেন। এখানে আশা করার কিছু নেই। সবকিছুই সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। সরকারি উকিল সবসময় জামিনে বাধা দেন।
যে কারও জামিনেই বাধা দেন। তারপরও বিচারপতিরা জামিন দেন। বাধা দেওয়াটা বিষয় না, বিষয়টা হলো সরকারের কতটুকু ইচ্ছা আছে, তা। এখন সরকারের যদি অন্য কোনও ইচ্ছা না থাকে, তাহলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি তার মুক্তির দাবিতে আমাদের ৪ সপ্তাহের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জামিন না পেলে পরবর্তী সময়ে বসে করণীয় ঠিক করা হবে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আশা করি, আইনি-প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। আমাদের আইনজীবীরা সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে জামিনের জন্য ফাইল করে দেবো এবং আগামী সপ্তাহ থেকে মুভ করবো।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আইনজীবীরা তাদের কাজ করছেন, আমরা রাজনীতিবিদরা আমাদের কৌশলে কাজ করে যাচ্ছি। তার মুক্তির জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।
বিএনপির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার জামিনের আগে তার মুক্তি আন্দোলনে বা অন্য কোনও রাজনৈতিক ইস্যুতে কঠোর কর্মসূচিতে গিয়ে মাঠে টিকে থাকা মতো সাংগঠনিক অবস্থা নেই দলের। ফলে সাদা-মাঠা কর্মসূচির মধ্যে টিকে থাকতে হবে।
কারণ আগামী ৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে। আগাম নির্বাচনের কোনও সম্ভবনা নেই। তাই কোনও ঝামেলা না গিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার পাশাপাশি নিজের সংগঠনকে গুছিয়ে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দলের হাইকমান্ডের।
আর দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমার মনে হয়, বিচার বিভাগ যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন।
এরপরও সরকারের সব কর্মকাণ্ডকে বিশ্লেষণ করে আমাদের রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করা হচ্ছে। মুক্তির দাবিতে কর্মসূচিও দেওয়া হবে। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে হতে পারে।
এদিকে গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ৪ সপ্তাহের কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্তের কথা জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের বিভাগীয় শহরে মিছিল-সমাবেশের মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করা হবে।